শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫, ১১:২৮ পূর্বাহ্ন

কুষ্টিয়ায় সর্বোচ্চ শনাক্ত ১৯৫, মৃত্যু ৫

কুষ্টিয়া প্রতিনিধিঃ কুষ্টিয়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৭৭ নমুনা পরীক্ষা করে ১৯৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। জেলায় এটিই এখন পর্যন্ত এক দিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত। এ সময়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ১৮৫ জন এবং মারা গেছেন ১৮৫ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ৫ হাজার ২৮০ জন। শনিবার (২৭ জুন) রাতে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসকের অফিস এ তথ্য জানিয়েছে।

নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৩৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ। নতুন করে শনাক্ত হওয়া ১৯৫ জনের মধ্যে কুষ্টিয়া সদরের ৬৩ জন, দৌলতপুরের ২৪ জন, কুমারখালীর ৩৬ জন, ভেড়ামারার ২৯ জন, মিরপুরের ২২ জন ও খোকসার ২১ জন রয়েছেন। মৃত পাঁচজনের মধ্যে দুজন কুমারখালী উপজেলার, একজন করে মিরপুর, খোকসা ও সদর উপজেলার বাসিন্দা।

এ পর্যন্ত জেলায় ৫৯ হাজার ৭৯৮ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য নেওয়া হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া গেছে ৫৮ হাজার ৩০৩ জনের। বাকিরা নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদনের অপেক্ষায়।

বর্তমানে কুষ্টিয়ায় সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৭২০ জন। তাদের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১৬৪ জন এবং হোম আইসোলেশনে আছেন ১ হাজার ৫৫৬ জন।

এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে কুষ্টিয়া জেলায় এক সপ্তাহের লকডাউন চলছে। রোববার (২০ জুন) রাত ১২টা থেকে শুরু হওয়া এই লকডাউন রোববার (২৭ জুন) রাত ১২টা পর্যন্ত চলবে। কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম এ সংক্রান্ত গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেন।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে কুষ্টিয়া জেলায় ৭ দিনের লকডাউন চলমান রয়েছে। শুধু ওষুধ, নিত্যপ্রয়োজনীয় মুদি দোকান, কাঁচাবাজার ছাড়া সবধরনের দোকান, শপিংমল বন্ধ থাকবে।

গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সবধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিল্প-কারখানা, শপিংমল, দোকান, রেস্টুরেন্ট ও চায়ের দোকান বন্ধ থাকবে। তবে কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা রাখা যাবে। পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার সবধরনের পরিবহন বন্ধ থাকবে।

কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে বর্তমান সময়ে সর্বোচ্চ শনাক্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড হচ্ছে। সব উপজেলায় হু হু করে বাড়ছে মৃত্যু ও শনাক্তের সংখ্যা। সম্প্রতি কুষ্টিয়া পৌরসভায় সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। কিন্তু পুরো জেলায় কঠোর লকডাউন চলছে। এরপরও কেন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, লকডাউনেও মৃত্যুর মিছিল চলছে, তা নিয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন। করোনার সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে তাতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া বেশ কঠিন হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা জানান, করোনার শুরু থেকেই কুষ্টিয়া জেলায় শনাক্তের হার কখনও ২০ শতাংশের ওপরে যায়নি। কিন্তু এখন শনাক্তের হার ৪০ শতাংশের ওপরেও উঠে যাচ্ছে। প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যু ও শনাক্তের সংখ্যা।

এদিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালকে করোনাভাইরাস ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। জেনারেল হাসপাতালে শুধু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হবে। তবে প্রসূতি ও নবজাতকদের জন্য স্ক্যান ও গুরুতর রোগীদের জন্য সিসিইউ ওয়ার্ড চালু থাকবে। এ ছাড়া ২৪ ঘণ্টা হাসপাতালে জরুরি সেবা খোলা থাকবে। তবে এ সময় বহির্বিভাগ বন্ধ থাকবে।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. তাপস কুমার সরকার বলেন, কুষ্টিয়ায় হু হু করে বাড়ছে করোনা। করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। হাসপাতালের দোতলার সবকটি ওয়ার্ডে করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য ২০০ শয্যা স্থাপন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, করোনা ছাড়া অন্য কোনো চিকিৎসা দেওয়া এ মুহূর্তে সম্ভব হচ্ছে না। রোগীদের চাপ সামাল দিতে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com